পরীক্ষার চাপকে জয় করুন: ১৮তম বিজেএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে মানসিক স্বাস্থ্য ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের জরুরি কৌশল
পরীক্ষার চাপকে জয় করুন: ১৮তম বিজেএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে মানসিক স্বাস্থ্য ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের জরুরি কৌশল
পরীক্ষার তারিখ: ১ নভেম্বর, ২০২৫
প্রিয় ১৮তম বিজেএস প্রিলিমিনারি
পরীক্ষার্থী বন্ধুরা,
আর মাত্র ক'দিন পরেই আপনাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, বহু আকাঙ্ক্ষিত ১৮তম জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (BJS) প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এই সময়টা একদিকে যেমন চূড়ান্ত প্রস্তুতির, তেমনই আরেকদিকে প্রচণ্ড মানসিক চাপ ও উদ্বেগের। দিনের পর দিন পরিশ্রম, সিলেবাস শেষ করার তাড়া, আর ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা—সব মিলিয়ে মন ও মস্তিষ্ক যেন বিশ্রামহীন এক যুদ্ধক্ষেত্র।
কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার প্রস্তুতি যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখা। মানসিক চাপ বা টেনশন যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা আপনার এতদিনকার প্রস্তুতিকে
নষ্ট করে দিতে পারে। পরীক্ষার হলে শান্ত ও স্থির মনই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি।
আসুন জেনে নিই, এই শেষ মুহূর্তে কীভাবে আপনারা আপনাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখবেন এবং পরীক্ষার স্ট্রেস ও টেনশনকে নিয়ন্ত্রণে আনবেন:
১. রুটিন মেনে
চলুন, পর্যাপ্ত
ঘুম নিশ্চিত
করুন
পরীক্ষার আগে অনেকেই ভাবেন যে এক মুহূর্তও নষ্ট করা যাবে না। তাই জোর করে রাত জাগা বা কম ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি হয়। কিন্তু এটি আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, স্মৃতিশক্তি
এবং মনোযোগের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন রাতে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো আবশ্যক। ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে
রিচার্জ করে এবং শেখা বিষয়গুলোকে স্মৃতিতে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যেতে সাহায্য করে। পরীক্ষার আগের রাতে অন্তত ৭
ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- নিয়মিত রুটিন: পড়াশোনা, খাওয়া, এবং ঘুমের একটি নির্দিষ্ট
রুটিন মেনে চললে আপনার শরীর ও
মন একধরণের স্থিতিশীলতা লাভ করে, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
২. ছোট ছোট বিরতি নিন এবং শরীরচর্চা করুন
দীর্ঘ সময় একটানা পড়াশোনা করলে ক্লান্তি বাড়ে এবং মনোযোগ কমে যায়।
- শর্ট ব্রেক: প্রতি ১ ঘণ্টা বা ৪৫ মিনিট পড়ার পর ৫-১০ মিনিটের একটি ছোট্ট বিরতি নিন। এই সময় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান, একটু হেঁটে আসুন, বা চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিন।
- ব্যায়াম বা হাঁটা: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা দ্রুত হাঁটাচলা করুন। শারীরিক কার্যকলাপ মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কমাতে এবং মেজাজ ভালো রাখতে সহায়ক হরমোন (এন্ডোরফিন) নিঃসরণ করে।
৩. মাইন্ডফুলনেস ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন
(Breathing Exercise)
যখনই মনে হবে উদ্বেগ বা টেনশন খুব বেড়ে যাচ্ছে, তখন এই কৌশলটি ব্যবহার করতে পারেন।
- গভীর শ্বাস: একটি শান্ত জায়গায় বসুন। চোখ বন্ধ করুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে ৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিন, তারপর ৭
সেকেন্ড ধরে শ্বাস ধরে রাখুন এবং ৮
সেকেন্ড ধরে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে ৫-১০ বার করুন। এটি দ্রুত আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে
শান্ত করে।
- ধ্যান (Meditation): দিনে মাত্র কয়েক মিনিট মেডিটেশন বা মননশীলতার (Mindfulness) অভ্যাস আপনার মনকে বর্তমান মুহূর্তে স্থির রাখতে এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ক্যাফেইন
নিয়ন্ত্রণ
আপনার খাবার আপনার মনের ওপর প্রভাব ফেলে।
- সুষম খাদ্য: পরীক্ষার
সময় ফল, শাকসবজি, শস্যদানা এবং চর্বিহীন প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। এটি মস্তিষ্ককে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
- ক্যাফেইন পরিহার: অতিরিক্ত
চা বা কফি খাওয়া আপাতত কমিয়ে দিন। ক্যাফেইন সাময়িক উদ্দীপনা দিলেও তা উদ্বেগ, অস্থিরতা ও
ঘুমের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৫. নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং ইতিবাচক চিন্তা করুন
পরীক্ষার আগে নেতিবাচক চিন্তা আসা খুবই স্বাভাবিক, যেমন: "আমার সিলেবাস শেষ হলো না", "আমি কি পারবো?"। এই চিন্তাগুলোকে
মোকাবিলা করা জরুরি।
- ইতিবাচক আত্ম-কথন: নেতিবাচক চিন্তার বদলে নিজেকে বলুন: "আমি আমার সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিয়েছি, আমি চেষ্টা করব", "আমি শান্ত থাকব এবং মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দেব।"
- তুলনা পরিহার: অন্য পরীক্ষার্থীদের
প্রস্তুতির সাথে নিজেকে তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার লক্ষ্য এবং আপনার সামর্থ্য একান্তই আপনার নিজস্ব।
৬. আপনজনের সাথে
কথা বলুন
মানসিক চাপ কমাতে বা উদ্বেগ ভাগ করে নিতে বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা শিক্ষকের সাথে কথা বলুন। আপনার অনুভূতিগুলো
প্রকাশ করা মানসিক বোঝা হালকা করতে সাহায্য করে। আপনি একা নন, আপনার পাশে অনেকেই আছেন।
৭. পরীক্ষার দিনের
জন্য প্রস্তুতি
১লা নভেম্বরের জন্য এখন থেকেই কিছু প্রস্তুতি নিন:
- পরীক্ষার ভেন্যু: পরীক্ষার
আগের দিন ভেন্যু দেখে আসুন, যাতে শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়ো বা টেনশন এড়ানো যায়।
- প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র: প্রবেশপত্র,
কলম, পেন্সিল, স্কেচ পেন ইত্যাদি যা যা লাগবে, তা আগের দিন রাতে গুছিয়ে রাখুন।
- হলে পৌঁছে শান্ত থাকা: পরীক্ষার
হলে সময়মতো পৌঁছান। সিটে বসে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করে নিজেকে শান্ত করুন। প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর তাড়াহুড়ো না করে মনোযোগ দিয়ে নির্দেশনাগুলো পড়ুন।
মনে রাখবেন, এই পরীক্ষাটি আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কিন্তু এটিই আপনার জীবনের শেষ নয়। আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং সুস্থ মানসিকতাই আপনাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
সবাইকে শুভেচ্ছা। আপনারা নিশ্চয়ই পারবেন! শুভকামনা রইল।
Comments
Post a Comment